সোম. ডিসে ২৩, ২০২৪

ভাঙা ডিমে স্বাস্থ্যঝুঁকি

জুন২৮,২০২৪ #স্বাস্থ্যকথা

পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও ঈদের আগে থেকে চড়া  হওয়া ডিমের বাজারে কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না। দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ভাঙা ডিমের চাহিদা বেড়েছে। তাই অধিক তাপমাত্রায় নষ্ট হওয়া বা ফেটে যাওয়া ডিম ফেলে না দিয়ে খোলাবাজারে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব ডিম খেলে বা ডিম দিয়ে তৈরি করা খাদ্য খেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য ও প্রাণী অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার সকালে নগরের অন্যতম ডিমের আড়ত পাহাড়তলী, রেয়াজউদ্দিন বাজার ও বক্সিরহাটের ডিমের আড়তগুলো ঘুরে ভাঙা ডিম বিক্রির দৃশ্য চোখে পড়ে।
দেখা যায়, এসব আড়তে মুরগির ডিম বিক্রি করা হচ্ছে ডজনপ্রতি ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকা আর হাঁসের ডিম ২১০ টাকা। এরমধ্যে ভেঙে যাওয়া ডিম বিক্রি করা হচ্ছে ডজনপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। সঙ্গত কারণে ভাঙা ডিমগুলো ছিল অপরিচ্ছন্ন।
জানা যায়, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, মুন্সীগঞ্জের পোল্ট্রি ফার্মের ব্যবসায়ীদের থেকে পাইকারিতে কিনে আনেন চট্টগ্রামের আড়তদাররা। সরবরাহের সময় পরিবহনের ঝাঁকুনিতে যেসব ডিম ভেঙে যায় তা শত হিসেবে কিনে নেন হোটেল- রেস্টুরেন্ট ও বেকারি খাদ্যদ্রব্য তৈরিকারকরা। ভালো ডিমের তুলনায় দাম কম থাকায় এসব ডিম কিনে নেয় তারা।
আইস ফ্যাক্টরি রোডের বেকারি কর্মচারী মো. সাদেক বলেন, সাধারণত বেকারির খাবারগুলো তৈরি করতে উপকরণ হিসেবে ডিম ব্যবহার করা হয়। একটি বেকারিতে দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ ডিম প্রয়োজন হয়। বর্তমানে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় সস্তায় পাওয়ার কারণে বেকারি ব্যবসায়ীরা ভালো ডিমের পাশাপাশি ভাঙা ডিমগুলোও কিনে নেয়।
বিআরটিসি রোডের ডিমের আড়ত থেকে ভাঙা ডিম কেনেন ওই স্থানের রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী নাজমুল। তিনি বলেন, ভাঙা ডিম সচরাচর স্বাভাবিক ডিম থেকে কমদামে পাওয়া যায়। আর আমরা এসব ডিম পরটা, সমুচা, বার্গারে ব্যবহার করি। ভাঙা বলেই অর্ধেক দামে পাওয়া যায়। এতে আমাদের খাবার তৈরিতে খরচও কম পড়ে।
শুধু ব্যবসায়ীরা নন, দাম কম হওয়াতেই এসব ডিম কিনছেন সাধারণ ক্রেতারাও।
বক্সিরহাটে আসা আশামনি বড়ুয়া বলেন, বাজারে ভালো ডিমের দাম বাড়তি। তাই ভাঙা ডিম কিনছি। ভালো ডিম আর ভাঙা ডিমের মধ্যে তেমন পার্থক্য দেখি না।
রেয়াজউদ্দিন বাজারের ক্রেতা বশির উদ্দিন বলেন, ভালো ডিম ডজন ১৫০ টাকা, আর ভাঙা ডিম ৭০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া যায়। দাম কম থাকায় এসব ডিম কিনি। বেশি কিনে ফ্রিজে রেখে দিলে নষ্ট হয় না।
বাজার অনুযায়ী ডিমের দাম ওঠানামা করলেও এমন ডিম সবসময় কম দামে বিক্রি হয়।
ভাঙা ডিমের ব্যাপারে পাহাড়তলীর ডিমের আড়তদার মো. ইদ্রিছ বলেন, প্রতিদিন প্রতিটা আড়তে হাজার হাজার ডিম আসে। তার মধ্যে ৩০০ থেকে ৫০০ ডিম ভাঙা পড়ে। এসব ডিম আমাদের থেকে হোটেল ও বেকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নেন। পাশাপাশি খুচরা বিক্রি করার জন্য অনেক ব্যবসায়ীরাও ভাঙা ডিম খোঁজেন।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, ভালো, অক্ষত খোসাযুক্ত ডিমের শেলফ লাইফ কমপক্ষে তিন সপ্তাহ থাকে। তাপমাত্রা ওঠানামা না করলে খোসাযুক্ত ডিম পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকতে পারে। কিন্তু ফাটা খোসাযুক্ত ডিমের শেলফ লাইফ মাত্র দুই ঘণ্টা, তারপরে সেগুলো পচে যায়। অনেক সময় এসব ডিমের খোসায় কালো দাগ পড়ে।
বাংলাদেশে ফাটা ডিমের ব্যবহার ও বিক্রয় অনুমোদিত কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশির আহম্মদ বলেন, ফাটা খোসার ডিমগুলোতে সালেমোনেলা ও অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যাতে বিষক্রিয়া হতে পারে। আমরা বরাবরই এসব ডিম খেতে মানুষকে নিরুৎসাহিত করি। আর এসব ডিম দোকানে বিক্রি করাও অনুমোদিত নয়।
মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) ব্যাখ্যা অনুযায়ী, সালমোনেলা দ্বারা আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষের সংক্রমিত হওয়ার ১২ থেকে ৭২ ঘণ্টা পরে ডায়রিয়া, জ্বর, পেটে খিঁচুনি এবং বমি হয়। এসব লক্ষণ সাধারণত চার থেকে সাত দিন স্থায়ী হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়াই ভালো হয়ে যায়। তবে কারও কারও ডায়রিয়া এত গুরুতর হতে পারে যে, তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন হতে পারে। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা না করালে এসব রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, একটা স্বাভাবিক ডিমের চেয়ে ভাঙা ডিম অবশ্যই অস্বাস্থ্যকর। কারণ ডিমটির খোসা ভেঙে যাওয়ার পর দুয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ঘটে। তাহলে ওই ডিমে সালমোনেলা ভাইরাস থাকবে। তবে সিদ্ধ বা ওমলেট করা হলে ওই ভাইরাস নষ্ট হতে পারে। কিন্তু তা যদি কিনে ফ্রিজে রাখা হয় কিংবা তাপমাত্রাহীন বেকারি খাবার বানানো হয়, তাহলে অবশ্যই ভিব্রিও কলেরা ও শিগেলা ভাইরাস থাকার আশঙ্কা রয়েছে এবং এসব খাবারে স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিও রয়েছে।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, সাধারণত ভাঙা ডিমের সঙ্গে যদি মুরগির বিষ্ঠা লেগে থাকে, তাহলে দ্রুত জীবাণু ছড়ায়। এসব খেলে ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আর একটি ভাঙা ডিমে কোন ব্যকটেরিয়া বা ভাইরাসের উপস্থিতি ঘটছে, তা নির্ভর করবে ডিমটি ভাঙা অবস্থায় কোন পরিবেশে রাখা হয়েছে তার ওপর। তবে এসব ডিম কেনার সময় অবশ্যই সচেতন হতে হবে।

এই ধরনের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *