সোম. ডিসে ২৩, ২০২৪

যে কারণে বুড়িগঙ্গার মাঝিরা ঘরে থাকেন না

জুন২৫,২০২৪

ডিউটি টাইম বিকাল ৫টা থেকে রাত ২টা। কাজ শেষে পন্টুনে ফিরে নৌকাতেই ঘুমান মাঝিরা। খুব অল্প সম্বল তাদের। জামাকাপড় বলতে লুঙ্গি, শার্ট আর গেঞ্জি। ঘুমানোর সরঞ্জামের মধ্যে চাটাই, পাতলা কাঁথা আর বালিশ। আরও আছে গামছা। নৌকা বাওয়ার লগি আর বৈঠার কাজ বিশ্রামকালেও কমে না। কখনো এগুলো মশারি বাঁধার খুঁটি, কখনোবা কাপড় শুকানোর লাঠি।  

সদরঘাট থেকে কিছুটা পূর্বে ফরাসগঞ্জ ঘাটে তিনটি পন্টুন নিয়ে একটি জেটি। বিশ্রামবারে দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলো এখানে ভিড়ে থাকে। তাদের আড়ালে আশ্রয় নিয়ে ভাসে গুটিকয় নৌকা। ফরাসগঞ্জ জামে মসজিদ ঘাট থেকে ওপারে কালিগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত এগুলো যাত্রী পারাপার করে। 

ডিউটি টাইম বিকাল ৫টা থেকে রাত ২টা। কাজ শেষে পন্টুনে ফিরে নৌকাতেই ঘুমান মাঝিরা। খুব অল্প সম্বল তাদের। জামাকাপড় বলতে লুঙ্গি, শার্ট আর গেঞ্জি। ঘুমানোর সরঞ্জামের মধ্যে চাটাই, পাতলা কাঁথা আর বালিশ। আরও আছে গামছা। নৌকা বাওয়ার লগি আর বৈঠার কাজ বিশ্রামকালেও কমে না। কখনো এগুলো মশারি বাঁধার খুঁটি, কখনোবা কাপড় শুকানোর লাঠি।  

ঈদের দিন (১৭ জুন, ২০২৪) সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছেন খোরশেদ কবিরাজ। সত্তরের কাছাকাছি তার বয়স। পয়ত্রিশ বছর ধরে বুড়িগঙ্গায় নৌকা চালাচ্ছেন, সমান সময় ধরে শয্যাও পেতেছেন নৌকাতেই। তার আছে দুটি পাঞ্জাবী, একটি শার্ট ও দুটি লুঙ্গি। আরও আছে চিরুনি, আয়না, মিল্লাত ঘামাচি পাউডার আর সরিষার তেলের  শিশি।

ঈদের দিন সকাল। ঘুম থেকে উঠে বিদ্যুৎ কালো নিমের মাজনের শিশিটি বের করলেন খোরশেদ। ডান হাতে বোতলের ছিপি খুলে বাম হাতে মাজন-গুড়ো ঢেলে দাঁত সাফ করলেন। তারপর ডাঙ্গায় গেলেন সাপ্লাই পানিতে গোসল করতে। দশ টাকা গুনতে হয় এরজন্য। দশ টাকা দামের ছোট একটি সাবান কিনে রেখেছিলেন আগের রাতেই। সেটি দিয়ে গোসল সেরে নৌকায় ফিরে পাউডার গায়ে মাখলেন; আর হাত, পা ও মুখে দিলেন তেল। আয়না ও চিরুনি বের করে চুল আঁচড়ে নিলেন। 

তার ওয়্যারড্রোব এবং ড্রেসিং টেবিল বলতে ভারী পলিথিনের একটি ব্যাগ, যেটি থাকে নৌকার খোলে। শেষে ব্যাগ থেকে একটি সাদা রঙের জোব্বা বের করলেন। এটি তার বিশেষ পোশাক। আগের দিন লন্ড্রি থেকে আয়রন করিয়ে এনে রেখেছেন। জোব্বা গায়ে দেওয়ার পর মানুষটিকে শুভ্র দেখাল, চললেন ঈদের নামাজ পড়তে। 

মাঝারি গড়নের মানুষটির এই বয়সেও  চুলে পাক ধরেনি, গুছিয়ে দাড়ি রেখেছেন, মুখ তেল চকচকে। নামাজ সেরে ফরাসগঞ্জ বাজারের বরিশাল হোটেলে গেলেন। বরাবর এই হোটেলেই খাবার খান। আজ ঈদের দিন বলে সেমাই দিয়ে পরোটা খাবেন। এক প্লেট সেমাই ৪০ টাকা দাম, আর পরোটা তিনটি ত্রিশ টাকা। নাস্তা সেরে এবার একটি পান  খাবেন। দিনে তার ত্রিশ টাকা খরচ হয় পানের জন্য। সারাদিনে এটুকুই যা বিলাসিতা। 

যে ছয়জন ফরাসগঞ্জ ঘাটে নৌকা বেঁধে থাকেন, তাদের সবার বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ। ডাঙ্গায় ঘর নেওয়ার সাহস কেউ করেননি। এতে যে ভাড়া বেঁচে যায় তা সংসারের অনেক কাজে লাগে। দলের ছয়জনের দুইজন খোরশেদ কবিরাজ ও রাজ্জাক হোসেনের বয়স বেশি, দেলোয়ার হোসেন ও হারুন আকন্দ মাঝবয়সী, রবিউল আর রুবেল অল্পবয়সী। 

বত্রিশ বছর বয়সী রুবেল এক বছর হলো বুড়িগঙ্গায় পারাপারের কাজ করছেন। তার আগে মেহেন্দিগঞ্জে পানের বরজ করতেন। দুই বছর আগের এক মৌসুমে প্রায় ১০ লাখ টাকার ফসল তার নষ্ট হয়ে যায়। তারপর আর উপায় না পেয়ে ঢাকায় এসে নৌকার হাল ধরেন। 

দুই ধরনের নৌকা আছে জামে মসজিদ ঘাটে— সিরিয়ালের নৌকা আর রিজার্ভ নৌকা। সিরিয়ালের নৌকাগুলো বড় হয়, ১০ জনের বেশি লোক ধরে। সিরিয়ালের নৌকা পেতে হলে ঘাট মালিক বা ইজারাদারকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। এ নৌকার মাঝিরা সিরিয়াল অনুযায়ী যাত্রী তুলে থাকে, তাদের হাঁকডাক করা লাগে না। 

এই ধরনের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *